সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১১

খালি পায় খানিকটা সময় সবুজের সজীবতায়!



ভ্রমণ কাহিনী লিখব লিখব করেও লিখতে পারছি না। সত্য কথা বলতে আমি লিখার কোন ক্লু খুঁজে পাচ্ছি না। পুরো সপ্তাহটাই জলে গেল! তাই বলে হাল ছাড়িনি। খুব বেশি দিন না হলেও আমি সোনার বাংলাদেশ ব্লগে নিয়মিত লেখার চেষ্টা করছি। আমি পেশাদার লেখক নই। আগে কখনও লেখতাম না। কিন্তু আমারও যে লেখার অধিকার আছে! একটু জোর করেই সাহসটা করলাম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করব বলে। কিন্তু স্টিকি করার মত একটা লেখা তো হওয়া চাই। যাহোক, ভ্রমণের উপর এটাই আমার প্রথম কিছু লেখার চেষ্টা।

কূল-কিনারা না পেয়ে অবশেষে নিয়মিত যেপথে হেঁটে বেড়াই সেই মেঠো পথই আমি ভ্রমণ কাহিণীর জন্য সিলেক্ট করলাম। কিন্তু শুরু করব কিভাবে? রাতে ভাবতে ভাবতে এক পর্যায়ে ঘুম এসে গেল..

ভোরের আযান শুনে বিছানা থেকে উঠে ওযু করলাম। বাড়ির চারধার আর পথের দু'ধারে বাহারী গাছের সারি। অতি প্রত্যুষে কুঁয়াশাচ্ছন্নতায় কিছু দেখা যায় না। গ্রামের পথ তাই কোনো লাইটও নাই। হাতে একটা টরস নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মসজিদে এলাম। জামায়াতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করলাম। নামাজের স্বাদ জামায়াতেই পাওয়া যায়। জামায়াতহীনে একা একা তেমন স্বাদ পাই না। একা একা পড়তেও ভাল লাগে না। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া জানাই আজকের ফজরের নামাজটি জামায়াতের সাথে আদায় করতে পেরে। নামাজ মোনাজাত তাসবীহ শেষ। একক্ষণে অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পাওয়ার কথা।




কিন্তু আবছা আবছা অস্পষ্টতা চারদিক ঘিরে রেখেছে। বুঝতে আমার একটুও কষ্ট হল না যে কুঁয়াশা করেছে। আমি যা জানি, এভাবেই শীত তার আগমন বার্তা জানান দেয়। আশ্বিন মাস শেষের দিকে। পৌঁষ ও মাঘ দু'মাস শীতকাল হলেও কুঁয়াশা আর শীতের আমেজ এক দেড় মাস আগে থেকেই পাওয়া যায়।


হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে ফিরছি। কুঁয়াশা অনেকটা কেটে গেছে। তবে শীতল হাওয়া শরীরে যেন আজ অন্য রকম শিহরণ জাগাচ্ছে। ফজরের নামায পড়ে প্রতিদিন বাড়ির আশপাশে কিছু সময় হাটা-চলার অভ্যাস করেই ফেলেছি। খালি পায়ে সকালের মাটি বেশ সতেজ লাগে। স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক ভাল তাও হাড়ে হাড়ে অনুভব করি। নিবিঢ়ভাবে পাখিরা এই সময় ডাকাডাকি করে কিচিরমিচির করে কিংবা গান গায়; যে যাই বলুক, সকালে পাখিদের কলরব আমার বড় ভাল লাগে। আমার মনে আনন্দ দেয়। দেহে প্রাণের সঞ্চার হয়। আর আমাকে নিষ্পাপ হতে শেখায়।


এই শান্ত পরিবেশে নিজেকে একটু মিলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা, বেজায় খাটুনি, এটার ওটার শব্দ আর নিজের ঝুট-ঝামেলাহীন এই সময়টাই আমি নিজের মত করে অনুভব করি। উপভোগ করি একান্তভাবে। মনের আনন্দে কখনো আবার সুরের ভূবনে হারিয়ে যাই।
"হিজল বনে পালিয়ে গেছে পাখি
যতই তারে করুন কেঁদে ডাকি
দেয়না সাড়া নিরব গহীন বন
বাতাসে তার ব্যাথার গুঞ্জরণ...
"

বাইপাস রাস্তার পাশে হলেও লোকজন একেবারে কম; গলাটা টেস্ট করার এইতো সময়! আসলে সময়টা কাজেই লাগে বেশ।


[এই ছবিতে দেখছেন আমাদের বাড়ির সীমানা সুপারী গাছের সারি]




পীচঢালা পথে হেঁটে বাড়ির বরাবর এসে বাড়ির দিকে চোখ ঘুরাতেই গাছের পাতার ফাঁকে সূর্যের উঁকি মারা চোখে পড়ল। দেখছি আস্তে আস্তে সূর্যের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। সূর্যের কিরণে প্রকৃতিতে এক অন্য রকম সৌন্দর্য্য অনুভব করলাম। দেখছি প্রকৃতি যেন সেজেগুজে আমাকে তার রূপের ঝলক প্রদর্শন করছে।


সবুজ পাতার ডগায় শিশির কণাগুলো চিকচিক করছে। মনের ভেতর থেকে এক নতুন ভাললাগায় আমি অজানা শিহরণে আনমনা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কখনো বা হেঁটে চারদিক ভাল ভাবে দেখছি..




প্রতিদিনের মতই বাড়ির আশপাশ ভ্রমণ করছি আর ছবি তুলছি। ২০-২৫টি ছবি তুলে
ফেললাম। একটু হাঁটি একটি করে ছবি তুলি আর কিছুটা স্নিগ্ধ অনুভুতি, এভাবে হৃদয় মন দু'ই ভরে যাচ্ছে। হেঁটে চলছি এই আইল দিয়ে খালি পায়।






এক মুঠো রোদ্দুর আর এক পশলা সবুজের সজীবতা অনুভব করতে এমন ফসলের মাঠের এপাশ-ওপাশ ঘিরেই মেলে।


শহরের মানুষগুলো কেমন যেন অদ্ভুদ। প্রকৃত সবুজের সজীবতায় নিজেকে কিছুক্ষণ মিলিয়ে নিতে এমন শিশির ভেজা সবুজকেই কল্পণা করুন। আর আমি তো আছিই। আগের দিন চলে এলে রাত ভোর হবার সাথে সাথে আমি আপনাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ব। যত ইচ্ছা সবুজ দিয়ে চোখ রাঙ্গীয়ে নিবেন। মনের ভেতর অনেকগুলো ভাললাগা জমা করে নিয়ে পুরোটা বছর শিশিরের অনুভূতিতে শীতল হয়ে থাকবেন। ঢাকার টঙ্গী থেকে মাত্র ১ঘন্টার পথ। একবার এসেই দেখুন না! অনেক অনেক ভাল লাগবে। আর এই ভাললাগাটুকু তুলে ধরবেন সোনার বাংলাদেশ ব্লগের ভ্রমণ কাহিণীতে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন