সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১১

শিক্ষক নামের কলঙ্ক

[আ বো জা সু ; একজন অভিভাবকের ভেতরের কথা]

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল এটা সবার জানা। আর স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এমন নোংরা কোনো ঘটনা কখনও যে ঘটেনি। কিন্তু আজ কেন এমনটি হলো। সমাজের কতটা অবক্ষয় ঘটলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন শিক্ষকের কাছে ছাত্রীর নিরাপত্তা থাকবে না, এমন সমাজ আমাদের কাম্য নয়। ছোট সময় পড়েছি "শিক্ষাগুরু পিতৃতুল্য"। পরিমলদের কি শিক্ষাগুরু বলা যায়? এ লজ্জা আজ সমগ্র শিক্ষক সমাজের। আর এ পরিমলদের যারা আশ্রয়দাতা তারা এ সমাজের মুখোশধারী ভদ্রলোক। যাদের মুখোশের আড়ালে থাকে অন্য রূপ। কিন্তু স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কোনো ধান্ধা থাকতে পারে এটা ভাবতেই ভাল লাগে না। কেননা, আমরাও তো ওই ধাপগুলো পার করে এসেছি। আমাদের সময় এমন কথাগুলোর সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম না, যেগুলো এখন শোনা যাচ্ছে; যেমন-কোচিংবাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্য। যে বাণিজ্যের ফাঁদে পড়ে আসল মেধাবীরা দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে আজ আমাদের সর্ষের ভেতরেই ভূত ছড়িয়ে পড়েছে। সমাজের উঁচুস্তর থেকে শুরু করে নিচুস্তর পর্যন্ত সব যায়গায়ই দুর্নীতি আর কালো হাতের একচেটিয়া প্রভাব। যে প্রভাবে পড়ে শিক্ষকও নিয়োগ হয় দলীয় মনোভাবে। ভালো কী মন্দ, যোগ্য কী আযোগ্য-দলীয়, এটাই তার বড় পরিচয়। দেশে যে সরকার আছে বা আইন আছে তা এখন আর মনে হচ্ছে না। আইন-কানুন, ভালো লাগা আর মন্দ লাগা আজ সব সরকারের জালে বন্দি। তাই এই নিয়ে দু'কলম না লিখে আর পারছি না। কারণ, আমার আদরের সোনামণিটিও ওই স্কুলেরই ছাত্রী।

আজ নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়, ভুলই কী করলাম স্কুলটিতে মেয়েকে ভর্তি করিয়ে? স্কুলটির গায়ে এমন কালিমা লেপন হবে তা কী আগে জানতাম? আর জানতাম না বলেই আমার ছয় বছর বয়সী মেয়েটিকে রাত দিন শুধু পড় পড় বলে মাথাটা খারাপ করেছি, কোথায়, কোন কোচিংয়ে ভালো পড়ানো হয় সেটি খুঁজে বের করেছি। ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার আগে তাকে রাত বারোটা আবার সকাল ৬টায় উঠিয়ে পড়াতে বসিয়েছি। আর বলেছি, ভিকারুননিসায় ভর্তি হতে পারলে তোমার জীবনটা অন্যরকম হয়ে যাবে। আজ মেয়েটির দিকে তাকাতে পারছি না। ও যখন প্রশ্ন করে আম্মু কী হয়েছে আমাদের স্কুলে? অনেক অভিভাবক স্কুলের সামনে মানববন্ধন করছে কেন? পরক্ষণেই যখন ও পত্রিকা পড়ে প্রশ্ন করে---- এ কথাটার মানে কী? কোনো জবাব দিতে পারি না। আড়ালে চোখ মুছি আর ভাবি, হে খোদা ওই নির্যাতিত মেয়েটির বাবা-মাকে তুমি কেমন রেখেছ? তারা পারবেন তো এমন বৈরী পরিবেশ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে! কত আশা নিয়ে যে একটি মেয়েকে এমন একটি স্কুলে ভর্তি করানো হয় সেটা একজব অভিভাবক ছাড়া কেউ বুঝবে না। সবাই চায় তার মেয়েটির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। আজ নির্যাতিত মেয়েটির ভবিষ্যৎ বিপন্ন। কাকে করব এজন্য দায়ী? আমি এজন্য দায়ী করব কলেজের প্রিন্সিপালকে, আর একজন অভিভাবক হিসেবে কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন, কেন দিয়েছিলেন একসঙ্গে ছয়জন পুরুষ শিক্ষককে নিয়োগ? আজ স্কুলটিকে কেন এমন প্রশ্নবিদ্ধ করলেন? আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, তার ভেতরে পাঁচজনই হিন্দু শিক্ষক। তাহলে আপনি কাকে খুশি করলেন? কারণ, এসব পরমলদের কেন এমন সুযোগ সুবিধা? বিবেক আপনার একবারও জাগ্রত হলো না একটি গার্লস স্কুলে এত পুরুষ শিক্ষক একসঙ্গে এভাবে নিয়োগ দিতে।


এই সেই পরিমল! যে কি না ছাত্র জীবন থেকেই দুশ্চরিত্রের। আর তাকেই কিনা এমন একটা স্কুলের শিক্ষক করলেন। আজ আপনাকে আমার আরো প্রশ্ন, নির্যাতিত মেয়েটি যখন আপনার কাছে এর বিচার নিয়ে গেল উল্টো আপনি মেয়েটিকে চেপে যেতে বললেন কেন? শেল্টার দিলেন পরিমলকে বাঁচানোর জন্য। শিক্ষকরা যখন প্রতিবাদ জানালেন বললেন, এটা 'মিয়্যুচাল সেক্স' আপনারা বড় কনজারভেটিভ, কেমন রুচি আপনার, কতটা আধুনিক মানসিকতা নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পেরেছেন কী? আর পারবেনও না। কারণ, ১৬ হাজার ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবক আজ মাঠে, শুধু তারাই নয় আজ বিবেকবান সবাই আমাদের পাশে, আপনার অপসারণ ছাড়া আমরা ঘরে ফিরে যেতে পারি না এবং যাবও না। কোনো টালবাহানা নয়, আপনি ভালোয় ভালোয় পদত্যাগ করুন। ফিরিয়ে দিন ভিকারুননিসার হারানো ঐতিহ্য- এ হোক আজ সব অভিভাবকের অঙ্গীকার। ফুঁসে ওঠা অভিভাবকদের আজ আপনি দমাতে পারবেন না।

আজ এমন ঘটনার পেছনে রয়েছে এক গভীর ষড়যন্ত্র, আর সেটা হলো এই প্রিন্সিপাল স্কুলটিতে ঢোকার পড়ই চেয়েছিলেন স্কুলটির নাম পরিবর্তন করতে। অভিভাবকদের প্রবল আপত্তির মুখে সেটি করতে দেয়া হয়নি। আজ আমি আমার এ ছোট্ট লেখনির মাধ্যমে সব অভিভাবকের উদ্দেশে আহবান জানাব, আজ আমরা কিন্তু কেউ নিরাপদ নই এই শিক্ষকের হাতে। তাই কোনো কথা নয়, প্রিন্সিপালের পদত্যাগই আজ আমাদের হওয়া উচিৎ একমাত্র দাবী।

নির্যাতিত মেয়েটি এবং তার পরিবারকে বলব, আপনারা ভেঙে পড়বেন না। আপনার মেয়েটিই শুধু নির্যাতিত হয়নি, ওর সঙ্গে যে আমরাও জড়িত, আমরা আপনাদের পাশে আছি এবং থাকব। যুগ যুগ ধরে পরিমলদের মতো হিংস্র জানোয়াররা এ সমাজে ছিল, আছে এবং থাকবে তাই বলে ওদের কাছে আমাদের পরাজিত হলে চলবে না।
------------------------------------------
হাতে মিলাও হাত
------------------------------------------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন